বিশালতার মাঝে একদিন – ২

প্রথম পর্বের পর

সেইন্ট মার্টিনে পা রেখে অদ্ভূত একটা অনুভূতি হওয়ার কথা ছিল। কোনো এক আজগুবি কারণে তেমন কিছুই হলো না। এতোদিন সেইন্ট মার্টিন নিয়ে মনে মনে যে চিত্র এঁকেছি, বাস্তবের সেইন্ট মার্টিন যেন সেই চিত্রের সঙ্গে খাপ খায় না। দূর থেকে সেইন্ট মার্টিন দেখে প্রথমেই যেই জিনিসটা বেমানান লাগলো, সেটা হলো মোবাইল কোম্পানির একটা টাওয়ার। অবশ্যই এই দ্বীপে প্রযুক্তির ছোঁয়া রয়েছে এবং তার প্রয়োজনও রয়েছে। কিন্তু একেবারে সামনে থেকেই এই টাওয়ার দেখতে পাওয়ায় সেইন্ট মার্টিনের পরিবেশের সেই প্রাকৃতিক ছোঁয়া পাবো ভেবেছিলাম, তা হারিয়ে গেল।

বাস্তবেও তাই হয়েছিল। সেইন্ট মার্টিন বেশ সুন্দর একটি জায়গা। সত্যিই অনেক সুন্দর। কিন্তু ততোটা সুন্দর নয় যতোটা আপনি মনে মনে ভাবছেন।

সেইন্ট মার্টিনেও রয়েছে লোকালয়। প্রথম দৃষ্টিতে ছোট একটি গ্রামের মতো মনে হবে এটি। এখানকার স্থানীয়দেরও বেশ দেখা যায়। তাদের বাড়িঘরও অনেকটা গ্রাম্য বাড়িঘরের মতোই। তাই জাহাজ থেকে নেমে হোটেল আর বিভিন্ন দোকানের ছোটখাটো বাজার পার হয়ে যখন দ্বীপের মূল সৈকতের দিকে যাচ্ছিলাম, তখন রাস্তার দু’পাশের দৃশ্য দেখে একটা গ্রাম বলাকেই পারফেক্ট মনে হচ্ছিল।

মূল সৈকতে যাবার আগে অব্শ্য হোটেল থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে নিয়েছিলাম। সকাল ৭টায় রওনা হয়ে সেইন্ট  মার্টিন পৌঁছেছি দুপুর তিনটেয়। খিদে তো লাগবেই। খাবার বলতে সেখানে সামুদ্রিক মাছ, মুরগি, সবজি ও ডাল ছিল। বলা বাহুল্য, এর আগের তিন কক্সবাজারের সৈকতে রূপচাঁদা মাছ নিয়েছিলাম। খুব একটা ভালো লাগেনি। তাই সেইন্ট মার্টিনের ভাজা রূপচাঁদার মনকাড়া ঘ্রাণ উপেক্ষা করে সবজি, মুরগি আর ডাল দিয়েই লাঞ্চ সারলাম। পরে অবশ্য জেনেছি, সেইন্ট মার্টিনে গিয়ে ভাজা রূপচাঁদা মাছ না খেলে যাওয়াটাই বৃথা! 😥

Continue reading

বিশালতার মাঝে একদিন-1

রাত করে ঘুমিয়েছি। তাই নিজে থেকে ঘুম ভাঙছিল না। অবশ্য আমি সন্ধ্যায় ঘুমিয়ে পড়লেও নিজ থেকে কখনোই আমার ঘুম ভাঙে না। 😉 তবে সেদিন একটু বেশিই টায়ার্ড থাকায় আম্মুর দশ-বারোবার ডাকার পরও ঘুম ভাঙেনি। পরে আমার বিরুদ্ধে মোটামুটি একটা যুদ্ধ ঘোষণা করা হলো। লক্ষ্য, আমাকে ঘুম থেকে উঠানো। অবশ্য যুদ্ধের প্রথম আক্রমণেই আমি হেরে গেলাম। যাই হোক, ঘুম থেকে উঠা মাত্রই আফসোস করা শুরু করলাম আরেকটু আগে কেন উঠলাম না। ঘড়িতে তখন প্রায় ছ’টার কাছাকাছি। সাতটার মধ্যে মোহাম্মদী গেস্ট হাউজের সামনে থাকতেই হবে যে কোনো উপায়ে।

তড়িঘড়ি করে কোনোরকমে হাত-মুখ ধুয়ে তৈরি হয়ে নিলাম। আম্মু-আব্বু, আপু আর মামা-মামি আগেই তৈরি হয়েছিল। অবশ্য আমার তৈরি হওয়ার জন্য কেউ বসে থাকেনি। সবাই মেকআপে ব্যস্ত। মনে হয় আরো দু’চার ঘণ্টা সময় থাকলে আরো দু’চার ঘণ্টাই টানা মেকআপ চলতো। 😐

যাই হোক, সাতটা বাজার দশ মিনিট আগে বের হলাম আমরা সবাই। ফ্ল্যাট থেকে মোহাম্মদী গেস্ট হাউজ পাঁচ মিনিটের পথ। সঙ্গে একটি না দু’টি ব্যাগে সারাদিনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। গেস্ট হাউজের সামনে এসে দেখলাম বাস অনেক আগেই চলে এসেছে। কিন্তু দেরি করার ফল হলো সবার পেছনের সিট! ধুর! মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল।

যাই হোক, বাসে উঠার পরও প্রায় 30 মিনিট পর বাস ছাড়লো। পাংচুয়ালিটি বা সময়ানুবর্তিতা জিনিসটা বাংলাদেশে একেবারেই নেই। আর আমি মনে করি যাদের মাঝে আছে তাদের উচিৎ ‘দেশের’ সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার উদ্দেশ্যে সময়ানুবর্তিতা ছেড়ে দেয়া। কারণ আমি নিজেই বহুবার এমন বিভিন্ন প্রোগ্রাম ইত্যাদিতে সময়মতো গিয়ে দেখি বেশি আগে চলে গেছি। 😐 যেমন, জাতীয় প্রেসক্লাবে একদিন সকালে 9টায় একটা প্রোগ্রাম হওয়ার কথা ছিল। বারবার বলে দেয়া হয়েছে সময় যেন ঠিক থাকে। আমি 8.45মিনিটে গিয়ে দেখি কারো কোনো খবরই নেই। সেই অনুষ্ঠান শুরু হয় 10.45-এর দিকে।

যাই হোক, বাস ছাড়ার পর বেশ ভালো লাগলো। সকালের দৃশ্য এমনিতেই খুব সুন্দর। তার উপর ঘন কুয়াশা পড়েছে। ড্রাইভার কীভাবে গাড়ি চালাচ্ছিল সেটাই চিন্তার বিষয় ছিল। আঁকাবাঁকা রাস্তা পেরিয়ে পাহাড়-পর্বতের মধ্য দিয়ে ছুটে চলছিল আমাদের বাস। এর মধ্যে নাস্তা দেয়া হয়, তবে কারোরই তেমন খিদে না থাকায় সবাই নাস্তা রেখে দেই।

দারুণ ও মনে রাখার মতো প্রচুর দৃশ্য দেখার পর অবশেষে 11.30 থেকে 12.00 টার মধ্যে কোনো এক সময় আমাদের বাস গন্তব্যে পৌঁছলো। বাস থেকে নামলাম। সেখানে উঠতে হবে আরেক যানে। সেটার পাস ছিল আমাদের কাছে। পাস দেখিয়ে টিকেট নিলাম। তারপর রোমাঞ্চকর এক যাত্রার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম রোমাঞ্চকর এক ব্রিজের উপর দিয়ে।

সবার মুখে জাহাজ-জাহাজ শুনলেও নিজ চোখে দেখে সাধারণ একটা লঞ্চই মনে হলো, যদিও এগুলোর কাজ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। যাই হোক, জাহাজে উঠে পড়লাম আরেক বিপদে। সিট নেই। এজেন্সি থেকে সিটের কথা বলা হলেও এখানে এসে দেখলাম ডেকের উপর কতগুলো প্লাস্টিকের চেয়ার ছাড়া আর কোনো সিট নেই। ভেতরে বসার জায়গা দেখলেও সেখানে কাউকে ঢুকতে দিতে দেখলাম না। ভয়াবহ রোদে গা পুড়ে যেতে লাগলো। কিন্তু কিছু করার ছিল না। ডেকের ছায়ার সাইডটা লোকে পরিপূর্ণ। এখনই যদি রোদেই বসা না যায়, তাহলে পরে আর বসাই যাবে না। তাই কোনোরকমে সবার জন্য চেয়্যার রাখা হলো। পরে অবশ্য বুঝেছিলাম সিটের দরকার পড়ে না। জাহাজ চলতে শুরু করলে মানুষ কেউ ভেতরে থাকে না। সবাই বাইরে চলে এসে ঘোরাঘুরি করে। যত রোদই হোক, তখন ঠান্ডা বাতাস লাগতে থাকে।

Continue reading